গ্র্যাভিটনের অস্তিত্ব - B@K@R_PHYSICS

বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

গ্র্যাভিটনের অস্তিত্ব

 

IMG_3769
পদার্থবিজ্ঞানে গ্র্যাভিটন হলো একটি তাত্ত্বিক বা কাল্পনিক কণা। বাংলায় একে বলা যায় মহাকর্ষ কণা। কারণ এ কণাকে গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষ বলের বাহক হিসেবে মনে করেন। আমাদের কাছে এখনও গ্র্যাভিটনের কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। তবে এ কণার চালচরিত্র কেমন হতে পারে, তা আগেই হিসেব কষে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের হিসেবে, গ্র্যাভিটন অবিশ্বাস্যভাবে ক্ষুদ্র, ভরহীন এবং বৈদ্যুতিকভাবে চার্জনিরপেক্ষ কণা। পদার্থবিদদের ধারণা, একটি বস্তু থেকে আরেকটি বস্তুতে গ্র্যাভিটন লাফিয়ে গেলে বস্তু দুটির মধ্যে মহাকর্ষ বল সৃষ্টির হয়। ফলে বস্তু দুটোকে ক্রমেই পরস্পরের কাছে টেনে আনে। সে কারণেই এটি মহাকর্ষ বলের বাহক কণা। অর্থাৎ এ কণার মাধ্যমেই এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে মহাকর্ষ বল বাহিত হয়।


মহাকর্ষ সম্পর্কে প্রথম গাণিতিক তত্ত্ব প্রস্তাব করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। সেটা ১৬৮০ সালের দিকে ঘটনা। মহাকর্ষ সংক্রান্ত তাঁর ধারণা এবং তাঁর প্রণয়ন করা সমীকরণগুলো খুবই নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। সে কারণে আজও নাসা মহাকাশযানগুলোর গতিপথের পূর্বাভাস দিতে সেগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে নিউটনের ধারণায় বেশ একটা তাত্ত্বিক সমস্যা ছিল। সেটা হলো: তাঁর সমীকরণ আসলে মহাকর্ষ কী বা কেন?—তার কিছুই ব্যাখ্যা করে না, শুধু বলটির পরিমাণ নির্ণ করে। সমীকরণটি শুধু এটুকুই বলে যে বড় বা ভারী বস্তুগুলো পরস্পরের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করে। আর সেই আকর্ষণের পরিমাণটাই নির্ভুলভাবে গণনা করা যায় নিউটনের সমীকরণ থেকে।

সে পরিস্থিতি পাল্টে গেল বিশ শতকের শুরুর দিকে। ১৯১৫ সালের শেষ দিকে জেনারেল রিলিটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতা নামে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন আলবার্ট আইনস্টাইন। একে আজও মহাকর্ষের সবচেয়ে নির্ভুল তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, মহাকর্ষ হলো ভারী বস্তুর কারণে স্থানকালের বক্রতার ফল। এর মানে হলো, একটা ভারী বস্তু তার আশপাশের স্থান ও কালকে বাঁকিয়ে দেয়। আর ওই বস্তুর পাশে থাকা অন্য ছোট বস্তুগুলো তার চারপাশে ঘুরতে বাধ্য হয়। এটাই মহকার্ষ। যেমন আমাদের সৌরজগতে সবচেয়ে ভারী বস্তু সূর্য তার চারপাশের স্থানকাল বাঁকিয়ে দেয়। তাই সূর্যের চারপাশে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ ও অন্য সব বস্তু ঘুরছে।


স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, গ্র্যাভিটন সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বা পরীক্ষামূলক প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কেন পদার্থবিজ্ঞানী গ্র্যাভিটনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন? এর উত্তরের খোঁজে মহাকর্ষের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তত্ত্ব এবং আধুনিক কোয়ান্টাম তত্ত্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বুঝতে হবে। চলুন, শুরু করা যাক।


শুধু সৌরজগতই নয়, মহাবিশ্বের অন্যান্য ভারী বস্তুর ক্ষেত্রেও আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার কথাগুলো প্রযোজ্য। তত্ত্বটি মহাবিশ্বের অনেক পরিঘটনাতে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর তা ‘প্রায় সবক্ষেত্রে’ই নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

এখানে ‘প্রায় সবক্ষেত্রে’ কথাটা খেয়াল করবেন। আসলে মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসরে সাধারণ আপেক্ষিকতা ব্যাপকভাবে সফল তত্ত্ব। কিন্তু পরমাণু, ইলেকট্রনের মতো অতিক্ষুদ্র জগতে তা ব্যর্থ। তাই অতিক্ষুদ্র জগতের সঠিক ব্যাখ্যা করা হয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব দিয়ে। এমনকি বিগব্যাং বা কৃষ্ণগহ্বরের সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দুতে এসে সাধারণ আপেক্ষিকতা উদ্ভট আচরণ করে। ভুলভাল ফলাফল দেয়। তখন আর এ তত্ত্বের ওপর ভরসা রাখা যায় না। তাই পরম বিন্দুর মতো কোনো কিছুর সঠিক ব্যাখ্যা পেতে আমাদের নতুন তত্ত্ব প্রয়োজন বলে মনে করেন পদার্থবিজ্ঞানীরা। সে তত্ত্বটি হবে কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং সাধারণ আপেক্ষিকতার মেলবন্ধনে তৈরি—মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম মহাকর্ষ। অনেকে এর নাম দিয়েছেন থিওরি অব এভরিথিং বা সবকিছুর তত্ত্ব।


কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্বগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এসব বলের মিথস্ক্রিয়া করার জন্য বা বল বহন করার জন্য এক বা একাধিক অতি-পারমাণবিক কণার প্রয়োজন।


অনেকেই হয়তো জানেন, কোয়ান্টাম তত্ত্বের মাধ্যমে কণাপদার্থবিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের মোট চারটি মৌলকের বলের মধ্যে তিনটি বলকে একত্রিত করেছেন। একে বলা হয় স্ট্যান্ডার্ড মডেল। একীভূত বলগুলো হলো বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বল। এই বলগুলোর ব্যাখ্যাকে সাধারণভাবে কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি বলা হয়। স্ট্যান্ডার্ড মডেল মোট ১৭টি মৌলিক কণা দিয়ে এদের ব্যাখ্যা করা হয়। এদের মধ্যে ফার্মিয়ন (কোয়ার্ক ও লেপটন—যেমন ইলেকট্রন কণা) এবং বোসন বা বলবাহী কণা (ফোটন, গ্লুয়ন, ডব্লিউ ও জেড বোসন) এবং ১টি হিগস বোসন কণা (কণাদের ভরের জন্য দায়ী)।

স্ট্যান্ডার্ড মডেল পরীক্ষামূলকভাবে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু এই তিন মৌলিক বলের সঙ্গে এখনও মহাকর্ষকে মেলানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু মহাকর্ষ তার অন্য জ্ঞাতি বলগুলো চেয়ে আলাদা। তাই একে অন্যান্য বলের মতো একই তাত্ত্বিক কাঠামোর সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু তার কারণটা কেউ জানে না। মহাবিশ্বের বড় রহস্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্বগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এসব বলের মিথস্ক্রিয়া করার জন্য বা বল বহন করার জন্য এক বা একাধিক অতি-পারমাণবিক কণার প্রয়োজন। যেমন বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের বাহককে বলা হয় ফোটন। অতি-পারমাণবিক কণার মধ্যে ফোটন (আলোর কণা) বিনিময়ের মাধ্যমে এই বলটি সঞ্চারিত হয়। আবার শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল ছড়িয়ে পড়ে গ্লুয়ন নামের কণার মাধ্যমে। আর তৃতীয় কোয়ান্টাম বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল বহনের জন্য প্রয়োজন হয় দুটি কণার—ডব্লিউ এবং জেড বোসন কণা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাকর্ষকেও কোয়ান্টামের মতো কোনো কণা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আর সেই ব্যাখ্যার জন্যই গ্র্যাভিটন কণার কল্পনা করা হয়েছে।

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে মহাকর্ষ সম্পর্কে এখন পদার্থবিদদের অনেক কিছুই জানা। তাই এসবের মাধ্যমে গ্র্যাভিটনের সম্ভাব্য বেশকিছু বৈশিষ্ট্য অনুমান করতে পারেন তাঁরা। আমরা জানি, মহাকর্ষের পরিসীমা অসীম। কারণ এ বলটি অনেক দূর থেকেও ক্রিয়া করতে পারে। তাই গ্র্যাভিটন অবশ্যই ভরহীন হতে হবে। আবার মহাকর্ষ বিদ্যুতের সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়া করে না, তাই গ্র্যাভিটন বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। আবার মহাকর্ষ হলো আকর্ষণকারী বল। এটি সবকিছুই কাছে টানে। তাই গ্র্যাভিটনের একটি অতি-পারমাণবিক স্পিন ২ থাকা উচিত বলে মনে করেন পদার্থবিজ্ঞানীরা (বলে রাখা ভালো, অন্যান্য কোয়ান্টাম বলবাহী কণাগুলোর স্পিন ১)।

কিন্তু শুধু কল্পনায় তো বিজ্ঞানী চলে না। কোনো তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে তার জন্য পরীক্ষামূলক প্রমাণও লাগে। গ্র্যাভিটনের ক্ষেত্রে তা যে এখনও পাওয়া যায়নি, তা এর মধ্যেই জেনে গেছেন। তাই গ্র্যাভিটন সংক্রান্ত তত্ত্ব যত দারুণই লাগুক, তা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাই গ্র্যাভিটনের এসব চালচরিত্র অনুমান করা গেলেও একে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি বিজ্ঞানীরা।


এখন অবধারিতভাবে মনে প্রশ্ন আসবে, এখানে বাধাটা কোথায়? গ্র্যাভিটন বা মহাকর্ষ কণা কেন সনাক্ত করা যাচ্ছে না?

আমাদের বর্তমানে প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকানুন এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় গ্র্যাভিটন সনাক্ত করা কতটা কঠিন, সে সম্পর্কে একটু ধারণা দিই।

প্রথমত, অন্য মৌলিক বলের তুলনায় মহাকর্ষ বল অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল। একটা ছোট্ট পরীক্ষা করে ব্যাপারটা হাতেনাতে প্রমাণ করা সম্ভব। একটা সাধারণ চুম্বক নিয়ে একটা পেরেক উঠিয়ে দেখুন। খেয়াল করুন, পেরেকটাকে পুরো পৃথিবী নিচের দিকে টানছে, কিন্তু ছোট্ট চুম্বক সেটা হার মানিয়ে ওপরে তুলছে। কাজেই মহাকর্ষ এতই দুর্বল যে একটা ক্ষুদ্র চুম্বক গোটা একটা গ্রহের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে দাঁড়ায়। হিসেবে দেখা গেছে, মহাকর্ষ বল বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের তুলনায় প্রায় ১০৩৬ ভাগ দুর্বল। এই দুর্বলতার জন্যই গ্র্যাভিটন সনাক্ত করা কঠিন। আসলে আমরা যখন কণাদের মধ্যে বল বিনিময় সনাক্ত করতে চাই—যেমন ফোটন বা গ্লুয়নের মতো—তখন সেই বল যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া দরকার, যাতে তার ছাপ ধরা পড়ে। কিন্তু গ্র্যাভিটনের প্রভাব এত দুর্বল যে সেটি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। গ্র্যাভিটনের সন্ধান করা যেন মহাসাগরে একটিমাত্র কণা খুঁজে বের করার চেষ্টা করার মতো।


গ্র্যাভিটন শনাক্ত করার জন্য আমাদের বিপুল পরিমাণ ভর প্রয়োজন। সেটাই কাজ করবে ডিটেক্টর হিসেবে। সেই সঙ্গে লাগবে, দুটি মহাজাগতিক বিশাল বস্তু একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষের মতো কোনো ঘটনা।


এবার এ লেখার শিরোনামের প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া যাক। গ্র্যাভিটনের অস্তিত্ব কি প্রমাণ করা সম্ভব?

গ্র্যাভিটনকে নিশ্চিত প্রমাণ করার জন্য বর্তমানে কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই ঠিকই, তবে ‘বেটারিজের নীতি’ আনুসারে এর উত্তর ‘না’ নয়। কারণ কোয়ান্টাম মহাকর্ষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক বাধা নেই। এটাই গ্র্যাভিটনের জন্য আশার বাণীর মতো। এর মানে হলো, ভবিষ্যতে হয়তো এমন কোনো পদ্ধতি ও প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হবে, যা দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে। তবে অদূর ভবিষ্যতের জন্য, এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে দেওয়া যাবে না। একমাত্র উত্তর হলো ‘হয়তো’।

যাই হোক, গ্র্যাভিটন শনাক্ত করার জন্য আমাদের বিপুল পরিমাণ ভর প্রয়োজন। সেটাই কাজ করবে ডিটেক্টর হিসেবে। সেই সঙ্গে লাগবে, দুটি মহাজাগতিক বিশাল বস্তু একে অপরের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষের মতো কোনো ঘটনা। অবশ্য সেরকম ঘটনাও মহাকাশে হরহামেশা ঘটে। যেমন বিশাল ভরের দাণবীয় দুটি কৃষ্ণগহ্বর বা দুটি নিউট্রন তারকার মধ্যে পরস্পরের আকর্ষণে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। একসময় কৃষ্ণগহ্বর দুটি একত্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত লাইগো ডিটেক্টরে এরকম একটি ঘটনার মাধ্যমে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষ তরঙ্গ সনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা এরকম ভয়াবহ মহাজাগতিক সংঘর্ষ থেকে শুধু মহাকর্ষ তরঙ্গই নয়, গ্র্যাভিটনও খুঁজছেন। কিন্তু সেটা সনাক্ত করা এত সহজ নয়। মহাকর্ষ দুর্বল হওয়ার কারণে একটি গ্র্যাভিটন আপনার দেহের ভেতর দিয়ে চলে গেলেও তা অনুভবও করতে পারবেন না। নিউট্রিনো কণার কথা মনে আছে। এই ভুতুড়ে কণা প্রায় এক আলোকবর্ষ (৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার) পুরু সীসার স্তরও ভেদ করে চলে যেতে পারে, কোনো মিথস্ক্রিয়া না করেই।


এক্ষেত্রে গ্র্যাভিটনকে বলা যায় এককাঠি সরেস। একটিমাত্র গ্র্যাভিটন শনাক্ত করাও অনেক কঠিন হবে। অনেকটা সমুদ্রের ঢেউয়ে একটিমাত্র অণুর প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। কতটা কঠিন? সে উত্তর দিয়েছেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসন। ২০১২ সালে এক বক্তৃতায় তিনি হিসেব করে দেখিয়েছেন, সূর্যের ৫ বিলিয়ন বছরের জীবদ্দশায় পৃথিবীর আকারের একটি ডিটেক্টর চালালে, গ্র্যাভিটন সনাক্ত করা সম্ভব মাত্র চারবার। বিজ্ঞানীদের আরেকটি হিসেবে, আমাদের বৃহস্পতি গ্রহের আকারের একটি ডিটেক্টর প্রতি দশ বছরে মাত্র একটি গ্র্যাভিটন সনাক্ত করতে পারবে। এমনকি সেই ডিটেক্টরটা যদি এটি একটি তীব্র গ্র্যাভিটন উৎসের (যেমন কোনো নিউট্রন স্টার) কাছেও থাকে, তবুও এর হেরফের হবে না।

আর বৃহস্পতির সমান এবং অতিসংবেদনশীল একটা ডিটেক্টর তৈরি করা তো চাট্টিখাটি কথা নয়। আমাদের বর্তমান প্রযুক্তিগত বাস্তবতায় সেটা শুধু কঠিনই নয়, এককথায় অসম্ভব। তাই গ্র্যাভিটন এখনও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। আরও অনেকদিনই হয়তো অধরাই রয়ে যাবে। তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। হয়তো নতুন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক ছোট ডিটেক্টর দিয়েই সেটা করা সম্ভব। গ্র্যাভিটনের খোঁজে এখন সেই উপায়ের সন্ধানে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। এমন একটি পদ্ধতির সম্ভাবনার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির স্টিভেন্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ইগর পিকোভস্কি।

IMG_3767


তাঁদের পদ্ধতিটা বেশ সরলই বলা চলে। এর জন্য দরকার ১৫ কিলোগ্রাম ভরের একটা বেরিলিয়াম বার বা অন্য কোনো উপাদান দিয়ে তৈরি একটা বার। একে পরম শূন্য তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হবে, যাতে সেটা সব তাপ হারিয়ে সর্বনিম্ন সম্ভাব্য তাপমাত্রায় পৌঁছে। তাতে বারটি সর্বনিম্ন শক্তির গ্রাউন্ড স্টেট থাকবে। বারের সবগুলো পরমাণু একটা দৈতাকার পরমাণুর মতো কোয়ান্টাম সিস্টেম হিসেবে কাজ করবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল গ্র্যাভিটন ডিটেক্টর।

এবার গভীর মহাকাশে কোনো নিউট্রন স্টার বা কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষ তরঙ্গ আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এমনিতে বেরিলিয়ামের এই বারের সঙ্গে একটা গ্র্যাভিটনের মিথস্ক্রিয়া করার সম্ভাবনা কম। তবে মহাকর্ষ তরঙ্গে এত বেশি গ্র্যাভিটন থাকবে যে অন্তত একটা না একটা মিথস্ক্রিয়া করতেও পারে। আর সেটা হলেই তো কেল্লাফতে। এখন সেই আশাতেই বুক বেধেছেন ইগর পিকোভস্কি ও তাঁর দল। তাই গ্র্যাভিটন নিয়ে আশা ছেড়ে দেওয়া কিংবা শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। দেখা যাক, কী হয়।

তাই তো বলি, কোনো লেখার প্রশ্নবোধক শিরোনাম দেখেই সবসময় ‘বেটারিজের নীতি’ বিশ্বাস করতে যাবে না। তাতে সিদ্ধান্ত নিতে ভুলও হতে পারে।


আবুল বাসার


সূত্র: উই হ্যাভ নো আইডিয়া/ জর্জ চ্যাম এবং ড্যানিয়েল হোয়াইটসন

বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

বিগ থিংক

কোয়ান্টাম ম্যাগাজিন

উইকিপিডিয়া







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন